আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে, আমরা সন্তুষ্ট: বি চৌধুরী
অনলাইন ডেস্ক:
বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান, সাবেক
রাষ্ট্রপতি, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) বলেছেন,
‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। আরও আলোচনা হবে।’
শুক্রবার (২ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন জোট নেতাদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বি চৌধুরী।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বৈঠকে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমার ধারণা তারা (যুক্তফ্রন্ট) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা হয়েছে। তারা (যুক্তফ্রন্ট) বলেছে, এই সরকার থাকলেও নিস্ক্রিয় থাকতে হবে। আমরা বলেছি, সংসদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই সরকার নিস্ক্রিয়। সরকার মেজর কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। নির্বাচনি এলাকায় তারা (সরকার) কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না।
গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তফ্রন্ট সাত দফা দাবি তুলে ধরেছে। এই জোটের দাবিগুলো নিম্নরূপ-
১. নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সম্ভব না হলে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন শতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। গ) সরকারি দলের প্রার্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন সরকার চাই। জাতীয় সরকার গঠন: প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েও একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সীমিত করতে হবে।
৪. আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের। তারা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সুনামের সঙ্গে করে আসছে। সুতরাং নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে-সেহেতু আমাদের প্রস্তাব,
ক. সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে।
খ. নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন, আটক রাখার ক্ষমতা ও তাদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে। যাতে করে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
৫. ইভিএম: আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক নির্বাচনে আমাদের অনেক আগ্রহ আছে, কিন্তু ইভিএম সম্পর্কিত যেসব প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট নেই। সেজন্য এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।
৬. নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭. নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন অতি সত্বর প্রণয়ন করতে হবে।
সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ,দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা, বিএলডিপি সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিএলডিপি সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ এর সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বাংলাদেশ জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাহবুব আলী, বাংলাদেশ জন দলের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনাইটেড মাইনরিটি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান দীলিপ কুমার দাস, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য, সাবেক এমপি, মজহারুল হক শাহ্ চৌধুরী এবং এনডিপি মহাসচিব মো. মাযহারুল হোসেইন ঈসা। এই সংলাপে নৈশভোজে পাঁচ পদের খাবার খেতে চেয়েছেন বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জোটকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের চিঠি বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় পৌঁছে দেন। চিঠিতে শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা বি. চৌধুরীর চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। সেই প্রস্তাবটি আপনি গ্রহণ করেছেন। আমরা খুশি হয়েছি, আপনি নির্বাচন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে বাংলাদেশ যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে বসার জন্য আপনার সময় ও সুবিধামতো আমন্ত্রণ জানালে খুশি হবো। জাতির এই রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সবার শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্যের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে বিশ্বাস করি।’গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আ স ম আব্দুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ জোট ঘোষণা করা হয়। জোট গঠনের পর থেকে কাদের সিদ্দিকী এই ব্যানারে আর কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এই বছরের ২০ জুলাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘যুক্তফ্রন্ট এখনও প্রেস কনফারেন্স করে নাই, কিংবা প্রকাশ্যে কোনও আলোচনাও করে নাই। এখনও বলতে পারি না আমি আছি না নাই।’
এরপর গত ১৩ অক্টোবর প্রেসক্লাবে বিএনপি-জাতীয় ঐক্য, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের বাকি দুই শরিক জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে গত ১৬ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি।
গত ১ নভেম্বর যুক্তফ্রন্টে যুক্ত হয়েছে আরও ছয়টি দল। দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট। এছাড়া বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতা মো. গোলাম রেজা, গণফ্রন্ট নেতা কামাল পাশা, মুসলিম লীগ নেতা নূর এ আলম, জনদল নেতা জয় চৌধুরী ও খলিল চৌধুরী।
শুক্রবার (২ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন জোট নেতাদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বি চৌধুরী।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বৈঠকে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমার ধারণা তারা (যুক্তফ্রন্ট) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা হয়েছে। তারা (যুক্তফ্রন্ট) বলেছে, এই সরকার থাকলেও নিস্ক্রিয় থাকতে হবে। আমরা বলেছি, সংসদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই সরকার নিস্ক্রিয়। সরকার মেজর কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। নির্বাচনি এলাকায় তারা (সরকার) কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না।
গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তফ্রন্ট সাত দফা দাবি তুলে ধরেছে। এই জোটের দাবিগুলো নিম্নরূপ-
১. নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সম্ভব না হলে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন শতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। গ) সরকারি দলের প্রার্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন সরকার চাই। জাতীয় সরকার গঠন: প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েও একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সীমিত করতে হবে।
৪. আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের। তারা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সুনামের সঙ্গে করে আসছে। সুতরাং নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে-সেহেতু আমাদের প্রস্তাব,
ক. সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে।
খ. নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন, আটক রাখার ক্ষমতা ও তাদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে। যাতে করে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
৫. ইভিএম: আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক নির্বাচনে আমাদের অনেক আগ্রহ আছে, কিন্তু ইভিএম সম্পর্কিত যেসব প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট নেই। সেজন্য এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।
৬. নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭. নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন অতি সত্বর প্রণয়ন করতে হবে।
সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ,দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা, বিএলডিপি সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিএলডিপি সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ এর সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বাংলাদেশ জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাহবুব আলী, বাংলাদেশ জন দলের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনাইটেড মাইনরিটি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান দীলিপ কুমার দাস, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য, সাবেক এমপি, মজহারুল হক শাহ্ চৌধুরী এবং এনডিপি মহাসচিব মো. মাযহারুল হোসেইন ঈসা। এই সংলাপে নৈশভোজে পাঁচ পদের খাবার খেতে চেয়েছেন বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি, অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জোটকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের চিঠি বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় পৌঁছে দেন। চিঠিতে শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা বি. চৌধুরীর চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। সেই প্রস্তাবটি আপনি গ্রহণ করেছেন। আমরা খুশি হয়েছি, আপনি নির্বাচন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে বাংলাদেশ যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে বসার জন্য আপনার সময় ও সুবিধামতো আমন্ত্রণ জানালে খুশি হবো। জাতির এই রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সবার শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্যের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে বিশ্বাস করি।’গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আ স ম আব্দুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ জোট ঘোষণা করা হয়। জোট গঠনের পর থেকে কাদের সিদ্দিকী এই ব্যানারে আর কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এই বছরের ২০ জুলাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘যুক্তফ্রন্ট এখনও প্রেস কনফারেন্স করে নাই, কিংবা প্রকাশ্যে কোনও আলোচনাও করে নাই। এখনও বলতে পারি না আমি আছি না নাই।’
এরপর গত ১৩ অক্টোবর প্রেসক্লাবে বিএনপি-জাতীয় ঐক্য, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের বাকি দুই শরিক জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে গত ১৬ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি।
গত ১ নভেম্বর যুক্তফ্রন্টে যুক্ত হয়েছে আরও ছয়টি দল। দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট। এছাড়া বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতা মো. গোলাম রেজা, গণফ্রন্ট নেতা কামাল পাশা, মুসলিম লীগ নেতা নূর এ আলম, জনদল নেতা জয় চৌধুরী ও খলিল চৌধুরী।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।