জয়বাংলা সম্পর্কিত
জয় বাংলা' নামে চারটি
পত্রিকা
মার্চের অগ্নিঝড়া দিনগুলো ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের
রক্তস্নাত সময়ে 'জয় বাংলা' হয়ে উঠেছিল অবিনাশী স্লোগান, মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেরণা। একাত্তরের ৭ মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিসংগ্রামের
অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন 'বাঙালির ম্যাগনাকার্টা'খ্যাত ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করে 'জয় বাংলা' উচ্চারণ করেছিলেন, সেই স্লোগান প্রতিধ্বনিত হয়েছিল গোটা জনসমুদ্রে।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা পাকিস্তান পায়েন্দাবাদ স্লোগানের মাধ্যমে হাজার মাইল দূরের শাসকগোষ্ঠী যে আধিপত্যের প্রতীকায়ন করতে চেয়েছিল, স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সময়ে 'জয় বাংলা' হয়ে উঠেছিল তার প্রতীকী কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবাদ। এমন নজির অনেক রয়েছে_ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক সাধারণ বাঙালিকেও শত অত্যাচার-নির্যাতন করে এ স্লোগানের বদলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ উচ্চারণ করানো সম্ভব হয়নি। বাঙালি প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু সাময়িক সুবিধার জন্যও 'জয় বাংলা' ছাড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবিরে এ স্লোগান ছিল মুক্তির বীজমন্ত্র।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশিত সংবাদপত্রের নামকরণেও স্বভাবত 'জয় বাংলা' বেশ প্রভাব ফেলেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে 'জয় বাংলা' নামে চারটি সংবাদপত্র প্রকাশের খবর পাওয়া যায়। ৩০ মার্চ নওগাঁ থেকে প্রথমটি, ১১ মে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মুখপত্র হিসেবে দ্বিতীয়টি প্রকাশ হয়। তৃতীয়টির প্রকাশকাল ১৭ জুলাই; কিন্তু এর সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রকাশনাস্থল
সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। আবার সিলেট জেলা থেকে সাংবাদিক আবদুল বাসিতের সম্পাদনায় প্রকাশিত জয় বাংলার প্রথম সংখ্যার প্রকাশকাল সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
আওয়ামী লীগের মুখপত্র 'জয়বাংলা' সম্পাদনা করতেন গণপরিষদ সদস্য আহমেদ রফিক। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন মতিন আহমেদ চৌধুরী। 'মুজিবনগর জয়বাংলা প্রেস' থেকে মুদ্রিত এই সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের প্রকাশক হিসেবে লেখা থাকত 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আহমেদ রফিক'। প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত প্রথম পত্রিকাও এটি, নম্বর-১। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যার মূল্য ছিল ২০ পয়সা। তৃতীয় সংখ্যা থেকে ২৫ পয়সা নির্ধারিত ছিল। ট্যাবলয়েড সাইজে ভালো কাগজে ছাপা হতো পত্রিকাটি। মোট ৩৪টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছিল। সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশ হয় ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এতে বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য-বিবৃতি, বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমতের সংবাদ ছাড়াও শেষ পৃষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের নিয়মিত খবর 'রণাঙ্গনে' ছাপা হতো। থাকত সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এতে নিয়মিত কলাম 'যা দেখছি যা ভাবছি' লিখতেন।
ব্যক্তি উদ্যোগে নওগাঁ থেকে প্রকাশিত 'জয় বাংলা' যদিও মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় প্রকাশনা ধরে রাখতে পারেনি, তবু ওই অঞ্চলে এর প্রভাব ছিল অনন্যসাধারণ। ইউনাইটেড ব্যাংকের তৎকালীন কর্মকর্তা এমজি হায়দার 'রহমতউল্লা' ছদ্মনামে এটি সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। প্রথমে দৈনিক, পরে সাপ্তাহিক আকারে প্রকাশ হয় এই সংবাদপত্র। প্রথম সংখ্যার মূল্য ছিল ১০ পয়সা। প্রথম দিন এক ঘণ্টায় এই পত্রিকার ২০০ কপি বিক্রি হয়েছিল বলে সম্পাদক পরে উল্লেখ করেছেন। দাম আদায়ে ঝামেলার কারণে দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে এই পত্রিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হতে থাকে। ফলে জয় বাংলা পাওয়ার জন্য প্রচণ্ড ভিড় থাকত। মোট ১১টি সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায় এটি।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।