শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের যুক্তিসঙ্গত আন্দোলনের পর ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ঘরে ফিরে গেছে। এজন্য শিক্ষক-অভিভাবকদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমণ্ডি ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় হামলার জন্য আবারও বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে এখন অনেক কিছুর অনুপ্রবেশ হয়ে গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দলটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ফোনালাপের উস্কানিমূলক বক্তব্যকে প্রকাশ্যে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়- এটা সুগভীর ষড়যন্ত্র।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেছে, শিক্ষার্থীদের এই অরাজনৈতিক ও নিরীহ আন্দোলনে তারা নিজেদের স্বার্থে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে রাজনৈতিক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। এই আন্দোলনকে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে চেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সায়েন্সল্যাব মোড়ে হামলার ঘটনায় ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের এক নেতার ছবিসম্বলিত একটি পত্রিকায় কাটিং দেখিয়ে তিনি বলেন, আমির খসরু মাহমুদের প্রকাশ্য আহ্বানটি তারা সিক্রেটলি সারাদেশে পৌঁছে দিয়েছিলেন। যার ফলে বিএনপি ও জামায়াতের তরুণ ক্যাডাররা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় আসে। যে মুহূর্তে তারা দেখলো, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জমছে না, তারা ঘরে ফিরে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে এই দুই দলের তরুণ ক্যাডাররা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শাহবাগ মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব মোড় হয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে আসে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের টার্গেটই ছিল আওয়ামী লীগ অফিস। আমি বিশ্বাস করি, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ও কিশোর-কিশোরীরা কেউ অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় আসেনি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। এদের আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করার কোনো এজেন্ডা নেই। এই এজেন্ডা তাদের যারা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে এখানে রাজনীতির নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।
শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় হামলার সঙ্গে ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবির জড়িত বলে দাবি করে তিনি বলেন, এসব হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত প্রমাণ দিতে পারলে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগের কেউ যদি জড়িত থাকে, তাহলে আমি বলছি আমাকে তথ্য-প্রমাণ দিন, তালিকা দিন। ছাত্রলীগের কারা জড়িত- আমি তার বিচার করবো।'
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, এই আইনে বেপরোয়া যান চালনায় মানুষ হত্যা হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর জেলের বিধান এবং হত্যার উদ্দেশে যানবাহন চালানোর ফলে হত্যা হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশে যানবাহন চালালে এবং তা প্রমাণ হলে তা ৩০২ ধারায় চলে যাবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ১৯৮৩ সালের আইনে বেপরোয়া যান চালনায় মানুষ হত্যা হলে তিন বছর জেলের বিধান ছিল। সেটাই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ৫ বছর জেলের বিধান করা হয়েছে। এই আইনে জামিনের কোনো সুযোগ নেই।
রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় বাসের মালিক, ড্রাইভার ও হেলপার গ্রেফতার হয়েছে। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। যদি প্রমাণ হয়, তারা হত্যার উদ্দেশে গাড়ি চালিয়েছে, তাহলে ৩০২ ধারায় বিচার করার সুযোগ আছে।
মহাসড়কে ছোট যানবাহনের কারণেও বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে- এ বিষয়টি আইনে আছে কি-না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সবকিছু আইনে আসে না। কিছু বিধি-বিধান আছে। সেগুলো সবাইকে মেনে চলতে হয়। বিধি-বিধান আইনে যুক্ত করতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অফিস শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিন খোলা থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সারাদেশে বিআরটিএ এর সব অফিস খোলা থাকবে। লাইসেন্স করা, লাইসেন্স নবায়ন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ জরুরি সেবাদানের সব কার্যক্রম এই সময় চলবে। সম্প্রতি ফিনটেস সার্টিফিকেটসহ জরুরি কার্যক্রমে বিআরটিএ অফিসে ভিড় বেড়েছে। এ কারণে বাস্তবতার নিরিখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সন্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দেলোয়ার হোসেন, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস এম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।