গণতন্ত্র সুসংহতকরণে কাজ করছে সরকার :প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের সৌজন্য সাক্ষাত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশে গণতন্ত্র সুসংহত এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
এ সময় কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়নে তার সংস্থা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বিগত সাড়ে ৯ বছরে উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’ সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সফলভাবে এই সামাজিক ব্যাধি মোকাবেলা করেছে। তিনি বলেন, আমরা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি। আমাদের সন্তানরা যাতে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখছি।
রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণের চাষাবাদের জমিগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দখল করে নেয়ায় স্থানীয়রা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে তাঁর সরকারের একটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নারীর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে এবং এই নারী সমাজের একটি বড় অংশ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে তরুণ উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করছি।’
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি এখন ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে উপনিত হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারের বিভিন্ন সময়োচিত পদেক্ষপের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। তাঁর সরকার সকল ধরণের খেলাধূলাকে উত্সাহিত করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল এশিয়া কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ছেলেদের ক্রিকেটেও তারা ভালো ফল করছে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদানকে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করে মহান মানবতাবোধের পরিচয় দিয়েছেন।’
প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের আহবান জানিয়ে বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে ব্যবসা ক্ষেত্রের বাধাসমূহ কমিয়ে আনা প্রয়োজন এবং এসএমই নেটওয়ার্ক জোরদার করার জন্য কানেকটিভিটির সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত ভাষণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি সম্প্রতি কেনিয়াতে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধির দেওয়া বক্তব্যই সব থেকে সেরা ছিল।’ সর্বশেষ ওশান কনফারেন্সে বাংলাদেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন মহাসচিব। এ দিনের বৈঠকে ক্রিকেট বিষয়ক আলোচনায় প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড একটি কমনওয়েলথ ক্রিকেট ক্লাব গঠনের পাশাপাশি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় এই খেলাটির উন্নয়নে কমনওয়েলথ ক্রিকেট লীগ চালু করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কমনওয়েলথ সনদের একটি কপিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের সফরে গত বুধবার কমনওয়েলথ মহাসচিব বাংলাদেশে আসেন।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।