বঙ্গবন্ধু থাকলে দেশ হতো 'প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড'
অর্থনীতি সমিতির সেমিনার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ 'প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড' হবে বলে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি জীবিত থাকলে তা এতদিনে বাস্তবায়ন হতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত আর কখনও হয়নি। গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে 'বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেত' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধকার ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত।
রোববার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা- সমকাল |
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। খুব কাছে থেকে তাকে দেখেছেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তার দুটি লক্ষ্য ছিল- স্বাধীনতা অর্জন এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া। তিনি একেবারেই শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন। কোনো গুদামে খাবার ছিল না, ব্যাংকে টাকা ছিল না; যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না। তার মধ্যেও অল্প দিনের মধ্যে যমুনা সেতু, সমুদ্রসীমা, স্যাটেলাইট- সব নিয়েই তিনি ভেবেছেন।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে সামরিক শাসন। বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের সময়ে। এর পর যারা বাংলাদেশের জন্ম চায়নি তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর যারা মনে করত- বাংলাদেশ টিকবে না, তারাই এখন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
মূল প্রবন্ধে আবুল বারকাত বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক আগেই আধুনিক মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। ১৯৯৪-৯৫ সালেই মাথাপিছু জিডিপিতে দেশটিকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় দাঁড়াত ৪২ হাজার ৫১৪ কোটি ডলার। ওই সময় মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার ছিল। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ২৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দুই মাস আগে বলেছেন, 'আমি অনেক রাজা-উজিরের সাক্ষাৎ পাই। তবে এতদিনে একজনই জাতির পিতার (বঙ্গবন্ধু) সাক্ষাৎ পেয়েছি।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানবের প্রয়াণ না হলে দেশ আরও এগিয়ে যেত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনের মূল বিষয় ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তার দর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলের যেখানে থাকার কথা ছিল, সেখানে যেতে পারেনি।
অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এজেডএম সালেহর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।