বট বলেছে ৩০০ শব্দে বঙ্গবন্ধু হয়না

অনলাইন ডেস্ক:
পিতা মুজিবকে নিয়ে কবি সাইফুল ইসলাম মিয়ার কবিতা


বট বলেছে ৩০০ শব্দে বঙ্গবন্ধু হয়না
*******************************
"ঘাঘর"নদীর কোল ঘেঁষেই একটা বয়সী বট
এখনো রোদ্দুর মুছে ছায়া আঁকে তুমুল মধ্যান্যে।
বিগত তিন পুরুষের কত যে কিংবদন্তি সে জানে! তার কোনই শেষ নেই।
বিকেল ঘনিয়ে এলে রোজ বাড়ি ফেরার পথে,
অনেকটা সময় জুড়ে তার ছায়ায় গুটিয়ে রাখি পা।
সন্ধে অবধি চলে সমৃদ্ধ ইতিহাসের পাঠ।
ও আমার দিব্যি নিয়ে বলেছিল।
আজ মুজিব ছাড়া অন্য কিছু নয়,
এবং আলাপে মুজিবই তার প্রিয় বিষয়।
একে-একে সে বলতে থাকে তার নায়কের কথা,
তবে বলি শুন , সেই সব দিনে -
গোপালগঞ্জ পাটগাতি টুংগীপাড়া গ্রাম।
অথবা ঘাঘর ছাড়াও,
মধুমিতা দাড়ির গাঙ, কাটাখাল,
শালদহ নদী,
এসব নামগুলোর তেমন একটা জনশ্রুতি ছিল না।
১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ ছিলো-
আমাদের জন্য একটা অবিশ্বাস্য দিন।
সেদিন এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন এক জ্যোতিময় প্রবাদপুরুষ।
তারপর বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে,
এই নদী আর এই সবুজ মাটির কথা।
তোমরা যারা এখন তাঁকে বঙ্গবন্ধু নামে চেনো,
স্বাধীনের আগে তিনি ছিলেন আমাদের প্রিয়তম শেখ সাহেব।
সুসময়ের একদিন আকাশে বাতাসে সয়লাব হলো এক আনন্দ খবরে।
বাবা শেখ লুৎফর রহমান,
মা সায়েরা খাতুনের কোল ভরে এলো একজন স্বাধীন মানচিত্রের স্বপ্নদ্রষ্টা।
যিনি এই নদী ও মাটিকে আপন করে নিয়েছিলেন জনমের তরে।
বলেছিলেন "সাত কোটি বাঙ্গালীর ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি,
আরও বলেছিলেন "আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী,আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই,তাহলে আমি শান্তিতে মরতেও পারবো না"
তিনি বলতেন "বিশ্ব আজ দুই শিবিরে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত,
আমি শোষিতের দলে" রবো আমরণ।
একবার ভাবো তো,
কতটা ভালবাসলে তাঁর মতো এভাবে বলা যায়!
"আমার সবচেয়ে বড় শক্তি-
আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি,
আর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা-
আমি তাদেরকে খুব বেশী ভালোবাসি"
অভিজ্ঞতার ভারে সমৃদ্ধ বট কিছুটা থামে, কি যেনো ভাবে!
একটান দম নিয়ে পুনরায় শুরু করে।
সময়টা স্পষ্ট মনে আছে এখনো। ১৯২৭ ইংরেজির এক প্রফুল্ল সকালে- গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করে নেয় তাদের সর্বকালের সেরা রিক্রুট।
ক্লাস রুম থেকে খেলার মাঠ সবখানেই
মুজিবীয় আভার বিচ্ছুরণে দিনমান উদ্ভাশ জনপদ।
এভাবেই ১৯২৯ থেকে ৩৪ এ পাঁচ বছর গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে।
সেও কি আশ্চর্য মুজিবময়!
একদিন আচমকা দুঃসংবাদে-
আমাদের বুক কেঁপে উঠে।
প্রাণোচ্ছল টুঙ্গিপাড়ায় ছেঁয়ে যায় মুজিবীয় বেদনা।
অসুখে যে পেয়েছে তাঁরে!
৩৪ থেকে সাইত্রিশ পর্যন্ত,
এ চার বছর খেয়ে নিল-
স্বপ্নবাজের চোখের ব্যারামে।
স্বাধীনতা যার নেশা,
অসুখের আর সাধ্য কি তাঁকে রুখে!
সার্জারির কদিন পর,
পুনর্বার অভিজাত সংগ্রামী ইচ্ছায়,
সব শঙ্কা মুছে ফেলেন স্বমহিমায়।
তিনি আবারও উঠে দাঁড়ান ভার হীন।
পৃথিবীর বুকে এঁকে দিতে পদচিহ্ন ।
কৈশর গেছে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে।
১৯৩৯ সালে সেখানেই শুরু,
তাঁর রোমাঞ্চকর রাজনৈতিক জীবন।
ঘটনাক্রমে সেই স্কুলেই একদিন,
তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী-
এ কে ফজলুল হকের সাথে দেখা হয়,
একজোড়া দীপ্তিময় চোখের।
যে চোখে লেখা ছিল নিযুত আগুন-
অঢেল ভালোবাসায়।
১৯৬৮ সালের ছয় দফা আন্দোলন, সত্তুরের প্রহসনের নির্বাচনের কথা, এসবতো তোমরা জানোই।
কিন্ত একাত্তরের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর,
সেই উত্তাল দিনের খবর কতটা জানো?
অথবা রেসকোর্সের সেই ঐতিহাসিক সাত'ই মার্চের কথা।
যেদিন একজন রাজনীতিকের কবিতার আসর বসেছিল উত্তাল জনসভায়।
অনেকে বলেন এটা ঠিক গতানুগতিক ভাষন ছিলোনা!
আবার কেউকেউ বলেন এটা ছিলো নিখাঁদ কবিতা।
তবে আমার ভাবনা খুবই সরল।
তাঁর ভরাট গলার ক'লাইন কথায়-আসলে কি ছিলো তা ঈশ্বরই জানেন!
সেদিন পাখীরাও ছিল তাঁর সাথে আকাশ পাহারায়।
ধিরে-ধিরে তাঁর ধ্রুপদী কণ্ঠ কম্পন তুলে যাদুময়।
মন্ত্রমুগ্ধ জনতা শোনে নিলো মুক্তির মন্ত্র।
"আমরা যখন মরতে শিখেছি,
তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না,এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
তারপর পুরো পৃথিবী দেখেছে বিস্ময়ে।
নিমিষেই কাদামাটির আঁলধরে,
মানুষের স্রুত লহমায় মিশে গেলো রাজপথে।
অনাগত সন্তানের হতে,
একটা মানচিত্র তুলে দিতে-
গর্ভবতী ভুলে গেলো প্রসববেদনা।
বই-খাতা ফেলে রেখে শহরমুখী হলো,
শত জাহানারার আদরের দুলাল।
বৃদ্ধা'র লাঠি মাটি ভুলে হয়ে গেলো নিপুণ তলোয়ার যুদ্ধের দামামায়।
স্বাধীনতার দাম বুঝে নিতে-
নেকড়ের আঁচড়ে ফালা-ফালা হলো,
কতশত বীরঙ্গনার পবিত্র শরীর।
আরো কত কি, কত যে দুঃখ কথা।
১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ তিনি গ্রেফতার হলেন,
বীর বাঙ্গালীর কন্ঠ রুখে দিতে চেয়েছিল কাপুরুষ।
রহিম উদ্দিন খাঁন তাঁর মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
যদিও তা কার্যকর করার সাহস তাদের ছিল না।
মুজিবীয় তেজে ভস্মীভূত হয়ে যায় হানাদারের মসনদ।
দশ'ই জানুয়ারি ১৯৭২,
দীর্ঘ কারাভোগের পর এভাবেই-
সদর্পে তিনি ফিরে আসেন বাংলায়।
ফিরে এলেন বাঙালির কাছে,
যাদের তিনি কাঙালের মতো ভালোবাসতেন।
মাটি ও মানুষের জন্য ভালোবাসার এত পিপাশা,আর কার আছে বলো ?
এভাবেই আমরা পেলাম কিছু নিজস্ব নদী, একটা সাগর আমাদের হলো।
সীমাহীন সবুজ অরণ্যে কেউকারাডাং, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের ভূমিতেই।
এতকিছু সহকারে তিনি আমাদের এনে দিলেন কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
তার বছর চারেক পর কেয়ামতের খবর নিয়ে এলো ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫।
কি ভয়ঙ্কর ছিল সেই রাত।
রাজপথে নেমে এলো হায়না,
তারা হৃদপিণ্ড খাবে বাংলার।
রক্তের লোভে গিধড়ের বীভৎস লালা ঝড়ে।
এঁকে এঁকে ফেলে দিলো নির্মম,
প্রিয়তমা স্ত্রী সন্তান সহ-
সেখানে যারা ছিলেন তাদের সব্বাইকে।
ভাবতে পারো কি ধ্বংসাত্মক পায়তারা ! সেখানে আদরের রাসেলও ছিলো পিশাচের নিশানায়!
সিড়ি বেঁয়ে স্রোত হয়ে নেমে আসে রক্তের নদী।
ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িটা যেন তখন-
গা ছমছমে এক আদিম শ্মশান।
জলপাই রং মুছে যায়় রক্ত-প্লাবনে।
কত স্পর্ধা! কতো পিপাশা তাদের ?
তারা ভুলে গেলো সব,
তাঁর প্রেম যতো ত্যাগ।
যদিও লাল রং তাদের খুবই অপছন্দের ছিলো এবং সবুজেও ঘৃণা!
তবওু এত রক্ত চাই পাষাণের সবুজ রাঙাতে!
একান্ত আলাপচারিতায় তিনিই একদিন বলেছিলেন,
"আমি যখন মারা যাবো তখন আমার কবরে একটা টিনের চোঙ্গা রেখে দিস, লোকে জানবে এই একটা লোক একটা টিনের চোঙ্গা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন আর সারাজীবন সেই টিনের চোঙ্গায় বাঙালি বাঙালি বলে চিৎকার করতে করতেই মারা গেলেন"
অথচ কিছু বিশ্বাসঘাতক খুনি আর দালালের ষড়যন্ত্রে এসবের কিছুই হলোনা।
আরো কিছু কবিতা শোনার ছিলো,
বাকি ছিল কিছু স্বপ্ন দেখা।
হে বঙ্গবন্ধু তবু মনে রেখো তুমি,
যতোই আসুক ফের ঘাত-প্রতিঘাত।
তোমার জন্য খোদার কাছে করবে ফরিয়াদ।
আর এই বাংলার মানুষ ফসলের জমি,
সকলেই থাকিবে নিশ্চয় তোমার কাছে ঋণী।
মোঃ সাইফুল ইসলাম মিয়া
২৫/০৭/২০১৯ ইং

কোন মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব‌্য/মতামত প্রদান করার জন‌্য ধন‌্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.