দারিদ্র্য আমেরিকার চেয়ে কমিয়ে আনব : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমেরিকার চেয়েও কমিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমার একটা লক্ষ্য আছে দারিদ্র্যের হার আরো কমিয়ে আনা। আমেরিকায় দারিদ্র্যের হার বোধ হয় ১৭/১৮ শতাংশ। যে করেই হোক এর থেকে কমিয়ে আনব। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমেরিকার চেয়ে এক শতাংশ হলেও কম থাকবে। এ জন্য সকলকে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে নবীন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেবল চাকরির জন্য চাকরি নয়, সেবার মানসিকতায় দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।’ গতকাল রবিবার সকালে শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে ১১০, ১১১ ও ১১২তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শাহবাগে সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন কোর্স সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে সনদপ্রাপ্তদের সঙ্গে গ্রুপ ছবিতে অংশ নেন —পিআইডি
কর্মক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ?ভুগে আত্মবিশ্বাসী হতে প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা চাইতেন বাঙালিরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে তাই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং আমরা তা করতে পারব। এই কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে, এই আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, খেয়াল রাখতে হবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক যেন আমাদের সমাজকে ধ্বংস করতে না পারে। প্রতিটি অর্থ জনগণের অর্থ এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা বেতন-ভাতা যা পাচ্ছি সেটা এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের অর্থ। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের উন্নতি করা এটাই আমাদের কর্তব্য। নবীন কর্মকর্তাদের সঠিক ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সৃষ্টিই হয়েছিল এদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার মাধ্যমে শোষিত বঞ্চিত মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে। তাই, এই দিনেই পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দলটির জন্ম। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ৮.১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। আমাদেরকে এটা বাড়াতে হবে।’
সম্প্রতি মুসলিম দেশগুলোর মোর্চা ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘ওআইসি সম্মেলনে যখন যাই, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি ছোট ছিলেন। তখন অনেকেই বলত, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে? তারা কিছুই করতে পারবে না। কয়েকটা প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। যেমন আমাদের ডলারের দাম কত বা আমাদের রিজার্ভ কত বা আমাদের বাজেট কী। প্রশ্নের জবাব শুনে অবাক হয়ে ইমরান খান বললেন, আজকে বাংলাদেশ তো পাকিস্তান থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে প্রায়ই তাদের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই এ কথা বলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটা রিপোর্ট নিশ্চয় পেয়েছেন, সেখানে বলেছে, যে কয়টি দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, এই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কাজ ছোট নয়- এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। লেখাপড়া শিখলে আমি ধান কাটতে পারব না, এটা কেমন মানসিকতা? একবার ফুলপ্যান্ট পরলে আর লুঙ্গি পরা যাবে না বা গামছা পরে মাঠে যাওয়া যাবে না, এই চিন্তা যেন মাথায় না থাকে। শেখ হাসিনা তার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি চোখে অপারেশন না হলে আমি নিজে চলে যেতাম। দেখিয়ে দিতাম, আমার কাছে সব কাজ সমান। যারা খাদ্য উত্পাদন করবে, তারা আমার কাছে ছোট হবে কেন?’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১১০, ১১১ এবং ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে পৃথক ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম আশিকুর রহমান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর কাজী রওশন আক্তার প্রমুখ। ১১০, ১১১ ও ১১২ তম কোর্সের রেক্টর পদক জয়ী তিন শিক্ষার্থী মাহবুব উল্লাহ মজুমদার, রঞ্জন চন্দ্র দে এবং মাবরুল আহমেদ অনিক অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

কোন মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব‌্য/মতামত প্রদান করার জন‌্য ধন‌্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.