গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা মানে ১৯৭৫ এর ১৬ ই আগষ্ট হতে পারেনা
যুগের প্রয়োজনে অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে ৫৭ ধারা অচল । বাঙ্গালী জাতির জীবনে
১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার আরাধ্য পুরুষ জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে স্ব পরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। অথচ সেই জগন্যতম
অমানবিক হত্যাকান্ডকে পাশ কাটিয়ে ১৯৭৫ এর ১৬ই আগষ্টে প্রকাশিত সকল জাতীয় দৈনিকে ১৫
ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের সংবাদ ছাপানো থেকে বিরত থেকে খুনি
খন্দকার মোশতাকদের শপথ গ্রহনের অনুষ্টানকে প্রধান শিরোনাম করা হয় সেদিন ই
গনমাধ্যমের সততা নিষ্টা ও নিরপেক্ষতার কবর রচিত হয়। সেদিনের সকল সংবাদ পত্র একজন
স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি কে স্বপরিবারে হত্যার ঘটনাকে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ না করে
জাতিকে অন্ধকারে রাখার নাম কি হত্যাকান্ডের মৌনসম্মতি নয় ? সাংবাদিকরা চাইলেই,
১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ৬টি সংবাদ পত্র রেখে সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করার অাদেশ
না মেনে পারতো কিন্তু তারা সেদিন কলমের শক্তির চেয়ে খন্দকার মোশতাকের শক্তিকে
বড় মনে করেছে, তার বশ্যতা স্বীকার করে আজকের বর্তমান সরকারের অনেক দায়িত্বশীল
নেতারাই সেদিন মোশতাকের সাথে আপোষ করে সংবাদপত্র প্রকাশ করেছেন। যারা আজ সরকারের
ভেতরে থেকে আড়ালে আবডালে সরকারের বাস্তবায়িত ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের লেলিয়ে
দিয়েছেন। তথ্য মন্ত্রীকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করছেন সারা দেশের প্রেসক্লাবে। সেদিন ১৫
অাগষ্ট বন্দুকের নলের মুখে সব বাঘা নেতারা মুস্তাকের মন্ত্রীসভায় যোগদান করে,
বিচারপতিরা অাদালত করে, সাংবাদিকরা পত্রিকায় খুনি মোশতাকদের কথা অমান্য করতে
চায়নি।
যদি তারা ইচ্ছে করে একটি সংবাদ গোপন করার অপরাধে আজকের আধুনিক
বাস্তবতায় ৫৭ ধারার প্রয়োজনীয়তা অনিস্বীকার্য হয়ে পড়ে। সেদিনের জগন্যতম দিনটি যখন
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আজকের প্রজন্ম সেদিনের চাপানো সংবাদপত্র সমূহে খুজে
না পায় তবে ধরে নিবে সংবাদ পত্রের নিরপেক্ষতার নাম ( শেয়ালের মুরগী ধরে খাবার
দৃশ্য অবলোকনকারী নিরপেক্ষ পথিকের মতই। পথিক চাইলে মুরগীকে তাড়িয়ে দিয়ে শেয়ালের
আহার হবার শংকাটি কমিয়ে দিতে পারত মুরগীর জীবন বাঁচত। কিন্তু পথিক শেয়াল বা মুরগী
কারো পক্ষ না নেবার কারনে শেয়াল ঠিকই মুরগীকে ধরে খেয়ে ফেলল আর পথিক ফ্যাল ফ্যাল
করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে থাকিয়ে রইল) তেমনি জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সংবাদ না
চাপিয়ে এদেশের সকল সংবাদ পত্রগুলো যেন স্বাধীন ও নিরপেক্ষতার নামে হত্যাকান্ডের
মৌন সমর্থন করল !
আজকের এই শোকের মাসে নিশ্চয় নতুন প্রজন্ম তাদেরও বঙ্গবন্ধুর
খুনিদের সমর্থক হিসেবে অবস্হান গ্রহনের জন্য হত্যাকান্ডের সমর্থক সম্পাদক ও কুশলীর
দৃষ্টান্তমূলক উপযুক্ত বিচার চাইতেই পারে ? সে দিন মূলত তারা নিজেদের ঈমান, আদর্শ
ও বিশ্বাস কে বিসর্জন শুধু দেয়নি বরং একটি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সেদিন
জাতির বিবেকরা জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করে। যা ব্যক্তিগত ভাবে ১৯৭৫ এর
১৬ই আগষ্টে প্রকাশিত সকল স্হানীয় ও জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
দাবী করছি।খুনিদের সমর্থন ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের তথ্য গোপনের দ্বায়ে তারা সকলে
রাষ্ট্রদ্রোহী।
মিথ্যা মানহানিকর ও প্রতারনা পূর্ণ সংবাদে
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনে আদালতে মানহানি বা ন্যায় বিচার চাইতেই
পারে। ইতিহাস সাক্ষী অতীতে অনুরুপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কারনে
শাস্তুি ও দন্ডিত হবার অনেক দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি। আবার সত্যকে মিথ্যা তথ্যে
উপস্হাপনের দ্বায়ে সাংবাদিকরা স্ব-সম্মানে বেকসুর খালাসের অনেক নজির ও আমরা
দেখেছি, তেমনি কন্যার ধর্ষিত হবার ন্যায় বিচার না পাবার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি
পিতা কন্য সমেত আত্নহত্যার উদাহারন আমাদের সামনেই ভেসে উটে। ধর্ষিতার ন্যায়
বিচারের স্বপক্ষে সংবাদ পত্র বড় চাপার অক্ষরে না চাপালেও, সমাজের ন্যায় বিচার
হীনতার কারনে আত্নহত্যার ঘটনাকে ফলাও করেই প্রচার করে পেটের দ্বায়ে তিল তিল করে
একজন নারী যখন অন্ধকার পথে হাটতে শুরু করে তখন পুঁজিবাদী সমাজের প্রতিভূ কর্পোরেট
মিডিয়াতে তাদের জীবন জীবিকা বা কর্মসংস্থান নিশ্চিৎ করতে তাদের মৌলিক অধিকারের স্বপক্ষে
সংবাদটি স্হান পায়না,তখন বুঝে নিতে হয় গনমাধ্যমের গুরুত্ব ও তাদের নিরপেক্ষতা এবং
স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, তারা সমাজের দর্পন হিসেবে
সংবাদপত্র কে জাতির সামনে উপস্হাপন করে। শোষিত বঞ্চিত নির্যাতিত নিপিড়িত লাঞ্চিত
মানুষের দু:খ দূর্দশাকে রাষ্ট্রের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ও প্রতিকার বা
ন্যায়বিচারের পথকে সুগম করে। তারাই মুলত নির্যাতিত মানুষের ত্রানকর্তা। সুখ দুখ
হাসি কান্না আনন্দ বেদনা সমাজের কাছে তুলে ধরাটা সংবাদপত্রের কর্তব্য।
তাছাড়া সংবাদ
পত্র সমাজের প্রতিটি শ্রেনী পেশার মানুষের মুখপাত্র হলেও ইদানিং রাজনীতি যেন মুখ্য
সমাচার। অথচ সেখানে থাকা উচিৎ ছিল শিক্ষক বুদ্ধীজীবি ডাক্তার ইঞ্জীনিয়ার ব্যবসায়ী
সহ সকল শ্রেনী পেশার নারী পুরুষ শিশুদের জন্য সংবাদ ও বিনোদনের খোরাখ অনেকাংশে
উপেক্ষিত। এক সময় সংবাদের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন থাকত আজ অধিকাংশ সংবাদপত্র স্ব স্ব
কর্পোরেট প্রতিষ্টানের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে সংবাদ খুজতে
হয় , ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আজ পুজির অন্তরালে হারিয়ে যায়। এদেশে হাজার
হাজার কোটি টাকার লুটপাট ও দূর্নীতির বা কেলেঙ্কারীর মত অজস্র অহরহ গুরুত্বপূর্ণ
সংবাদ অদৃশ্য শক্তির ইশারাতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় তখনই উপলব্ধী হয় তাদের স্বাধীনতা ও
নিরপেক্ষতা ।
তবে
সেক্ষেত্রে সমাজের আদর্শবান, সৎ নিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমীক শিক্ষিত সমাজ নাক ছিঠকে
এড়িয়ে না গিয়ে যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে আসে তবে হাজারো ৫৭
ধারাতে স্বাধীন সংবাদপত্রের কিছু যায় আসেনা। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী
যে কোন আইন অবশ্যই ন্যায় বিচারের পথকে অবরুদ্ধ বা বাকরুদ্ধ করার সামীল। তাই
রাষ্ট্র সামগ্রীক দৃষ্টিকোন থেকে ৫৭ ধারার পরিবর্তন-পরিবর্ধন সংযোজন-বিয়োজনের
মাধ্যমে বলবৎ রাখা উচিত বলে মনে করছি।
লেখক:
মোহাম্মদ হীরণ।
কোন মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য/মতামত প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
জয়বাংলা নিউজ.নেট।